সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৩

আধুনিক বিশ্বে প্রায় তিন কোটি মানুষ দাসত্বের জীবন কাটাচ্ছেন

নতুন এক সমীক্ষায় বলা হচ্ছে আধুনিক বিশ্বে প্রায় তিন কোটি মানুষ দাসত্বের জীবন কাটাচ্ছেন।
আর এর মধ্যে প্রায় দেড় কোটি মানুষই ভারতে দাসত্বের শিকার।

সংস্থার প্রধান নির্বাহী নিক গ্রোনো বলছেন, সমস্যা মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকার যথেষ্ট উদ্যোগী নয়।দাসত্ব-বিরোধী প্রচারণায় কাজ করছে অস্ট্রেলিয়ার এরকম একটি সংস্থা ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন তাদের বিশ্ব দাসত্ব সূচক ২০১৩ নামে তাদের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য দিয়েছে।
তিনি বলেন, কোন দেশে মানুষ কী ধরনের দাসত্বের জীবন কাটাচ্ছে এবং সেসব দেশের সরকার সমস্যা সমাধানে কী করছে সেটা তারা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
নিক গ্রোনো “অনেক দেশের সরকারের জন্যই এ সমীক্ষার ফলাফল অস্বস্তির কারণ হবে। কিন্তু আমরা চাই সরকারগুলো বিষয়টা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করুক এবং সমস্যা মোকাবেলায় উদ্যোগী হোক।”
১৬২ টি দেশের তথ্য নিয়ে তৈরি এই সমীক্ষায় দেখা গেছে ভারতেই সবথেকে বেশি মানুষ দাসত্বের জীবন কাটান – সংখ্যাটা প্রায় দেড় কোটি।
"তারপরেই রয়েছে চীন আর পাকিস্তানের নাম।বাংলাদেশ রয়েছে তালিকার দশ নম্বরে। সেদেশে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ দাসপ্রথার শিকার।তবে জনসংখ্যার অনুপাতে দাসত্বের জীবন কাটান এমন মানুষের তালিকায় শীর্ষে মরিতানিয়া।সেখানকার জনসংখ্যার প্রায় ৪ % মানুষই দাসপ্রথার শিকার।
সমীক্ষাটিতে বলা হচ্ছে, ঋণের দায় মেটানোর জন্য যেমন বিনা-পারিশ্রমিকে শ্রম দিতে বাধ্য করা হয়, তেমনই রয়েছেন জোর করে বিয়ে দিয়ে দেওয়া বা মানব-পাচারেরও শিকার হওয়া লক্ষ লক্ষ মানুষ।
তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ভারতের এই নতুন ধরণের দাসপ্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন চালাচ্ছে বন্ধুয়া মুক্তি মোর্চা।
সবচে বেশি মানুষ দাসত্বের শিকার ভারতে
সংগঠনের প্রধান স্বামী অগ্নিবেশ বলছিলেন, এই সমীক্ষার ফলাফল মোটেই আশ্চর্যজনক নয়।
স্বামী অগ্নিবেশের কথায়, “৭৮-৭৯ সালেই গান্ধী পিস ফাউন্ডেশন আর ভারতীয় শ্রম ইনস্টিটিউটের এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল যে ভারতের দশটি রাজ্যে প্রায় ২৬ লক্ষ মানুষ দাসত্ব করতে বাধ্য হচ্ছেন।
নব্য দাসত্বের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের একটি উদ্যোগের তিনি প্রধান ছিলেন প্রায় দশ বছর।
স্বামী অগ্নিবেশ বলেন, “তখনও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে যে তথ্য আসত, তা থেকেও প্রমাণ পাওয়া যেত যে ভারতেই সবথেকে বেশী মানুষ নতুন ধরনের এই দাসপ্রথার শিকার হচ্ছেন।”
নতুন ধরনের এই দাসপ্রথার শিকার হওয়া মানুষদের একটা বড় অংশ শিশু।
বিবিসি-র মিডিয়া অ্যাকশন উদ্ধার হওয়া এরকমই কয়েকজন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়েছে, যারা খুব ছোট বয়সেই দাসত্বের জীবন কাটাতে বাধ্য হয়েছিলেন।

এরকমই একজনের কথায়, “আমার যখন ৫ বছর বয়স, তখন থেকেই খেলার সময়ে জমিদারের লোকেরা আমাকে নিয়ে গিয়ে খাটাত, মারধর করত। তারপরে যখন বাবা মারা গেলেন, তখন জমিদারের লোকেরা একদিন খেলার সময়ে আমাকে ধরে নিয়ে যায়। বললো, বাবার নাকি অনেক ধার-কর্জ রয়ে গেছে – সেগুলো শোধ করার জন্য আমাকে খাটতে হবে। ইঁটভাটায় নিয়ে গিয়ে মারধর শুরু হলো আর সেখানেই কাজ করতে বাধ্য করা হলো।”

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷