মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৩

মৎস্যকন্যা


hanna
মৎস্যকন্যার অস্তিত্ব নিয়ে কৌতূহল, তর্ক-বিতর্কের শেষ নেই। এখনো এ নিয়ে চলছে গবেষণা। তবে রূপকথার জলের নিচে ঘুরে বেড়ানো মৎস্যকন্যা কিন্তু সত্যিই আছে! একটা না তাও, অনেকগুলো! বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জলের নিচে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অনেক মৎস্যকন্যা। 

যাদের কথা বলছি তারা কেউ কেউ শৌখিন মৎস্যকন্যা, কেউ বা পেশাদার। সবাই মূলত আন্ডারওয়াটার মডেল। নতুনত্ব, অ্যাডভেঞ্চারের হাতছানি, বৈচিত্র্য- সব মিলে বর্তমানে মৎস্যকন্যা হওয়াটা শখ শুধু নয়, পেশা হিসেবেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। অনেকেই এখন মৎস্যকন্যা এবং আন্ডারওয়াটার মডেলিং নিয়েই ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী হচ্ছেন, সফলও হয়েছেন অনেকে। তাদের মধ্য থেকে ছয়জন মৎস্যকন্যার রূপকথা নিয়ে আজকের আয়োজন। 

হানা ফ্রেজার
৩৭ বছর বয়সী হানার জন্ম অস্ট্রেলিয়ায় হলেও বসবাস যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলসে। হানা একজন মৎস্যকন্যা। ছোটবেলা থেকেই তার ভালো লাগতো মৎস্যকন্যা। মৎস্যকন্যাই ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান, ভালোবাসা। ৯ বছর বয়সেই টেবিল ক্লথ কেটে বানিয়ে ফেলেছিলেন মৎস্যকন্যার লেজ। বাড়ির সুইমিংপুলে কাটিয়েছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা, চর্চা করেছেন পানির নিচে বেশিক্ষণ থাকার। বড় হয়েও মৎস্যকন্যার প্রতি ভালোবাসা রয়ে গেছে। 

তাই পেশা হিসেবেই বেছে নিলেন মৎস্যকন্যা হওয়া। আলাদাভাবে তৈরি লেজ পরে সাগরের নিচে দিব্যি মৎস্যকন্যার মতো ঘুরে বেড়ান তিনি। আড়াই মিনিট পানির নিচে থাকতে পারেন হানা, যেতে পারেন ৪৫ ফুট পর্যন্ত গভীরে। অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রেও। আন্ডারওয়াটার মডেলিংও করেন হানা। তার স্বামী ডেভও একজন জলপ্রেমী ব্যক্তি। পেশায় সার্ফার ডেভ হানার এই অন্যরকম কাজ নিয়ে বেশ খুশি। 

ইয়ারা মেন্ডিন
Iara-Mandyn

ইয়ারা মেন্ডিনও একজন পেশাদার মৎস্যকন্যা। আগে তিনি ছিলেন একজন নাচিয়ে এবং মডেল। জলের প্রতি ভালোবাসা থেকেই বেছে নিয়েছেন আন্ডারওয়াটার মডেলিং ও মৎস্যকন্যার ক্যারিয়ার। একজন স্বীকৃত স্কুবা ডাইভার ও আন্ডারওয়াটার মডেল ইয়ারা। দুটি আলাদা লেজ আছে তার। পানির নিচে মডেলিং, ভিডিও এবং স্টান্ট দৃশ্যে অভিনয় করেন তিনি। স্বীকৃতিস্বরূপ তার ভিডিও ‘লেডি অব দ্যা লেক’ এর জন্য পেয়েছেন ওয়ার্ল্ড মারমেইড অ্যাওয়ার্ডস ২০১১ এর মোস্ট এনচ্যান্টিং মারমেইড ভিডিও অ্যাওয়ার্ড। পানির নিচে স্থিতিশীল অবস্থায় ৫ মিনিট ৩০ সেকেন্ড এবং সাঁতার কাটা অবস্থায় ৩ মিনিট ৫০ সেকেন্ড থাকতে পারেন ইয়ারা।  

ক্যারিয়েল 
kariel

ছোটবেলায় অডিটরি প্রসেসিং ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ছিলেন ক্যারিয়েল। এই ডিসঅর্ডারের কারণে একজন মানুষ অন্যদের চেয়ে দেরিতে দেখতে এবং শুনতে পায়। স্কুলে প্রতিদিন ক্লাসের পরেও আলাদা ক্লাস করতে হতো দেখার এবং শোনার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য। কিন্তু জীবনের প্রতি কখনো বিরক্ত হননি ক্যারি। স্বপ্নপূরণ করতে এগিয়ে গেছেন পূর্ণদ্যমে। ছোটবেলা থেকেই ছিলেন মৎস্যকন্যার ভক্ত। ৫ বছর বয়সে তার পরিবারের সদস্যরা বানিয়ে দিয়েছিলেন একটি লেজ। তাতে সন্তুষ্ট ছিলেন না ক্যারি। কীভাবে পানির নিচে ব্যবহারের উপযোগী লেজ বানানো যায়- এ নিয়ে সবসময় চিন্তা করতেন। 

এখন অবশ্য তার নিজের তৈরি ৪টি লেজ আছে, যার প্রতিটি বানাতে সময় লেগেছে ৩৫০-৪০০ ঘণ্টা। নিজের তৈরি অসম্ভব সুন্দর লেজগুলো বিক্রিও করেন ক্যারিয়েল। ২০০৯ সালে অরিগন থেকে হাওয়াইয়ে চলে আসেন তিনি। এখন সেখানেই বসবাস করছেন। তিন মিনিটের বেশি সময় পানির নিচে থাকতে পারেন ক্যারি, যেতে পারেন ৫০ ফুটেরও বেশি গভীরে। ক্যারি আন্ডারওয়াটার মডেলিং ছাড়াও বিভিন্ন শো-তে পারফর্ম করেন। বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসেন তিনি। নিজ উদ্যোগে বাচ্চাদের মধ্যে সমুদ্র সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন শো-এর আয়োজন করেন ক্যারি। সেসব শো-তে তিনি গল্পের মাধ্যমে বাচ্চাদের কাছে উপস্থাপন করেন কীভাবে আবর্জনা ফেলে মানুষ তার জলের রাজ্য নষ্ট করছে। 

মাহিনা


অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন মৎস্যকন্যা মাহিনা। ছোটবেলার মৎস্যকন্যা হওয়ার স্বপ্নকে বড় হয়ে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন তিনি। তিনি একজন পেশাদার মৎস্যকন্যা এবং আন্ডারওয়াটার মডেল। তবে নিজের স্বপ্ন সত্যি করার পরও মনে হলো কী একটা করা হলো না! 

তারপর মনে হলো, অসংখ্য শিশু স্বপ্ন দেখে মৎস্যকন্যা হওয়ার। তাদের স্বপ্ন সত্যি করার জন্য কাজ করা উচিত। এই চিন্তা থেকেই নিজে ডিজাইন করলেন ‘মারফিন’ অর্থাৎ মৎস্যকন্যার লেজ। মাহিনা মারফিনস তৈরি হয়েছে মৎস্যকন্যা হতে আগ্রহী শিশুদের কথা মাথায় রেখেই। এখন মাহিনার কল্যাণে অনেকের স্বপ্ন সত্যি হচ্ছে, হাসি ফুটছে অনেক মুখে, আর পূর্ণতা পেয়েছে মাহিনার নিজের ইচ্ছেগুলো। 

স্টেলা


ফ্লোরিডায় থাকেন এই মৎস্যকুমারী। পেশাদার আন্ডারওয়াটার মডেল এবং মৎস্যকন্যা তিনিও। সিলিকন দিয়ে তৈরি লেজ পরে মাছের মতোই ঘুরে বেড়ন সমুদ্রে। তার লেজটি দেখতে তিমি, ডলফিনদের মতো জলজ প্রাণীর লেজের মতো। সাগরের আবহ সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলে আকর্ষণীয় মৎস্যকন্যা হওয়ার জন্য সাগরের থিমের উপর জুয়েলারি, সামুদ্রিক ঝিনুক দিয়ে তৈরি টপ, আলাদা চুল ইত্যাদি ব্যবহার করেন স্টেলা। ফ্লোরিডা ছাড়াও বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে যেকোনো অনুষ্ঠানে তাকে নিয়ে যেতে পারেন আগ্রহীরা। তবে তার জন্য অর্থ গুণতে হয় একটু বেশিই। শিশুদের এবং বড়দের- সবার অনুষ্ঠানেই অংশ নেন স্টেলা। 
অডেট
odeete

মৎস্যকন্যা অডেটের বসবাস যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায়। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, চার বছর আগে ২০০৯ সাল থেকে তিনি ফেব্রিক দিয়ে মারফিন বানানোর চেষ্টা শুরু করেন। একই সঙ্গে অভ্যাস করেন পানির নিচে থাকার, শুরু করেন আকর্ষণীয়ভাবে সাঁতার কাটার চর্চাও।

এ সবই ছিল মৎস্যকন্যা হওয়ার প্রস্তুতি। এখন অডেটের সবগুলো কাজই সাফল্য পেয়েছে। নিজের প্রচেষ্টায় তৈরি করেছেন দুটি ভীষণ সুন্দর লেজ। পানির নিচে সাঁতার কাটার ক্ষেত্রেও দক্ষতা অর্জন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে মৎস্যকন্যা হয়ে পারফর্ম করে অসংখ্য মানুষকে আনন্দ দেন অডেট। 

এনিয়ে তার বক্তব্য ‘আমার কাজটিকে ভালোবাসি আমি। আমি মানুষকে আনন্দ দিই এবং তাদের স্বপ্নপূরণে উৎসাহিত করি।’ 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷